টেকনাফে অকালেই ঝরে গেল ৩১১ শিশু

হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ •

অকালেই ঝরে গেছে ৩১১ জন সম্ভাবনাময় ক্ষুদে পরিক্ষার্থী। সারা দেশের মধ্যে শিক্ষার হার সর্বনিম্ম হচ্ছে টেকনাফ উপজেলা। এত বেশী শিশু শিক্ষার্থী ঝরে যাওয়া নিয়ে স্থানীয় সচেতন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) এবং ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী (ইইসি) পরিক্ষার ১৭ নভেম্বর রবিবার ১ম দিনে টেকনাফ উপজেলার ১২টি কেন্দ্রে সর্বমোট ৩১১ জন পরিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল।

তম্মধ্যে ৯৯টি স্কুলের (কেজি, সরকারী-বেসরকারী স্কুলসহ) ১৬৫ জন এবং ৩৯টি মাদ্রাসার ১৪৬ জন। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আনন্দ-উৎসবের মাধ্যমে ১ম দিনের ইংরেজী বিষয়ের পরিক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। প্রত্যেক কেন্দ্রে একজন সরকারী অফিসার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, একজন কেন্দ্র সচিব হিসাবে স্ব-স্ব স্কুলের প্রধান শিক্ষক, একজন হল সুপার, একজন সহকারী হল সুপার, প্রতি ২৫ থেকে ৩০ জন পরীক্ষার্থীর জন্য একজন করে হল পর্যবেক্ষক দায়িত্ব পালন করেছেন। পুরো উপজেলার কোথাও অপ্রীতিকর কোন ধরণের অঘটনের খবর পাওয়া যায়নি।

জানা যায়, এবারে টেকনাফ উপজেলায় ১২টি কেন্দ্রে মোট ১৩৮টি প্রতিষ্ঠানের ৫ হাজার ৬০৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়ার কথা ছিল। তম্মধ্যে ৯৯টি স্কুলের (কেজি, সরকারী-বেসরকারী স্কুলসহ) ১ হাজার ৭৭৭ জন বালক, ১ হাজার ৯৮০ জন বালিকা, মোট ৩ হাজার ৭৫৭ জন। এতে মুসলিম ৩ হাজার ৬২৫ জন, হিন্দু ৪৯ জন, বৌদ্ধ ৮৩ জন, খ্রিস্টান নেই। তাছাড়া ৮ জন প্রতিবন্ধী পরিক্ষার্থী রয়েছে। স্কুলে ছেলের চেয়ে ১০৩ জন মেয়ে পরিক্ষার্থী বেশী। ৩৯টি মাদ্রাসার ৭৪৫ জন বালক এবং ১১০২ জন বালিকা মোট ১ হাজার ৮৪৭ জন। মাদ্রাসাসমুহে ছেলের চেয়ে ৩৫৭ জন মেয়ে পরিক্ষার্থী বেশী। মোট পরীক্ষার্থীদের মধ্যে (স্কুল ও মাদ্রাসা) ২ হাজার ৫২২ জন ছাত্র এবং ৩ হাজার ৮২ জন ছাত্রী। এবারে মোট পরীক্ষার্থীদের মধ্যে বালকের চেয়ে ৫৬০ জন বালিকা বেশি।

টেকনাফ উপজেলায় এবারের ১২টি কেন্দ্র হচ্ছে যথাক্রমে হোয়াইক্যং সরকারী প্রাইমারী স্কুল, নয়াবাজার সরকারী প্রাইমারী স্কুল, হ্নীলা শাহ মজিদিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা, হ্নীলা আদর্শ সরকারী প্রাইমারী স্কুল, লেঙ্গুরবিল সরকারী প্রাইমারী স্কুল, দরগাহরছড়া হামিদিয়া সরকারী প্রাইমারী স্কুল, সাবরাং সরকারী প্রাইমারী স্কুল, শাহপরীরদ্বীপ সরকারী প্রাইমারী স্কুল, শামলাপুর সরকারী প্রাইমারী স্কুল, বড়ডেইল সরকারী প্রাইমারী স্কুল, জিনজিরা (সেন্টমার্টিনদ্বীপ) সরকারী প্রাইমারী স্কুল, টেকনাফ মডেল সরকারী প্রাইমারী স্কুল।

বিপুল সংখ্যক শিশু শিক্ষার্থী অকালে ঝরে যাওয়া বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ এমদাদ হোসেন চৌধুরী (০১৮১৬৬০৯১৪৭) বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ ও আনন্দ-উৎসবের পরিবেশে অনুষ্টিত পরিক্ষায় এত বেশী পরিক্ষার্থীর অনুপস্থিতি সত্যি দুখঃজনক। তবে এর পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত টেকনাফ উপজেলায় বিভিন্ন কারণে শিশু শিক্ষার্থীদের মাঝে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

মাদক বিরোধী অভিযানে অনেক শিশুর অভিভাবক পলাতক, কারাগারে বা বন্দুকযুদ্ধের শিকার হয়েছেন। আবার অনেক শিশু পারিবারিক আর্থিক দৈন্যতার শিকার। তা সত্বেও এত বিশাল অংকের শিশুর অনুপস্থিতি মেনে নেয়া যায়না। পরিক্ষা শেষে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর তথ্য সংগ্রহ ও সুনিদ্দিষ্ট কারণ জানতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে’।

উল্লেখ্য, ২০১২ সনে মোট পরিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৮১৬ জন, ২০১৩ সনে ছিল ৩ হাজার ৭১২ জন, ২০১৪ সালে ছিল ৪ হাজার ৫৯৩ জন এবং ২০১৫ সালে ৫ হাজার ৬৭৭ জন, ২০১৬ সালে ৫ হাজার ৩৩৮ জন, ২০১৭ সনে মোট পরিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৬৩১ জন, ২০১৮ সনে মোট পরিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৫৮৮ জন।